জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বড় ঘোষণা
জুলাই সনদের সংবিধান বিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত গণভোটে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ আসে, তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে—বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।
আদেশ অনুমোদন, গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে।
এই আদেশে রয়েছে—
- সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবের ওপর গণভোট আয়োজন
- গণভোটের ফলের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন
তিনি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে। এতে নির্বাচন সাশ্রয়ী হবে এবং সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে না।
গণভোটের জন্য উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে বলে তিনি ভাষণে উল্লেখ করেন।
গণভোটে চারটি প্রস্তাব—একটি প্রশ্ন
জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপন করা চারটি মূল প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভোটারদের কাছে একটিমাত্র প্রশ্ন থাকবে—
“আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং সনদের সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি সম্মতি দিচ্ছেন?”
গণভোটের চারটি প্রস্তাব হবে—
ক) নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদ অনুযায়ী গঠন করা।
খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ থাকবে এবং সংবিধান সংশোধনে এর সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
গ) নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নসহ ৩০টি সংস্কার বাস্তবায়নে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ) সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।
ভোটাররা এই চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেবেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘হ্যাঁ’ হলে পরিষদ ১৮০ কার্যদিবসে সংস্কার সম্পন্ন করবে
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের মাধ্যমে অনুমোদন পেলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, এবং তারা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করবে।
সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে।
উচ্চকক্ষের মেয়াদ থাকবে নিম্নকক্ষের মেয়াদ পর্যন্ত।
জুলাই সনদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার অনুসারে সনদটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে—বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি জানান, এটি আজকের অনুমোদিত আদেশেও উল্লেখ করা হয়েছে।
