আল্লাহতায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি (খলিফা) হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষের ওপর যে দায়িত্ব ও আমানত অর্পণ করা হয়েছে, তা রক্ষা ও বিকাশে নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও সামর্থ্য ব্যয় করাই তার কর্তব্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমরা আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও পর্বতমালার কাছে আমানত অর্পণ করেছিলাম, কিন্তু তারা তা বহন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এবং তা থেকে ভীত হয়েছিল; তবে মানুষ তা গ্রহণ করেছিল। নিশ্চয়ই সে ছিল জালিম ও অজ্ঞ।’ -সূরা আহজাব: ৭২
এই প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনে পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও ধৈর্যের প্রয়োজন। আল্লাহতায়ালা কাজের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, মুমিনদের কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং একে এমন এক ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যার বিনিময়ে বান্দা পুরস্কৃত হয়- যদি সে কাজটি বিশুদ্ধ নিয়ত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদন করে। যদি কোনো মুমিন তার কাজের মাধ্যমে পৃথিবীকে উন্নত করতে চায়, আল্লাহর বাণী সমুন্নত করতে চায়, তবে সেই কাজ তার জন্য ইবাদতস্বরূপ হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে কেউ সৎকর্ম করে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আর সে মুমিন অবস্থায় থাকলে- আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন দান করব এবং তাদের কর্মের সর্বোত্তম প্রতিদান প্রদান করব।’ -সূরা নাহল: ৯৭
অতএব, যখন একজন মুমিন তার কাজের গুরুত্ব ও মূল্য উপলব্ধি করে বিশুদ্ধ নিয়তে কাজ করলে তা ইবাদতে পরিণত হয়। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তার জন্য বিশাল পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি আছে। একজন মুমিন তার সৎ কাজের জন্য পুরস্কৃত হতে হলে কিছু মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হয়। যদি এই শর্তগুলোর কোনোটি পূরণ না হয়, তবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে তার কাঙ্ক্ষিত প্রতিদান ও মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। শর্তগুলো হলো-
বিশুদ্ধ নিয়ত: কোনো কাজ শুরু করার আগে একজন মুমিনের অন্তরে থাকতে হবে নিখাদ নিয়ত- সে যেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজটি করে। নিয়ত যেন নাম-যশ, প্রশংসা বা পার্থিব লাভের জন্য না হয়। প্রতিদিন সে যেন নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘আমি যে কাজ করছি, তা শুধু আল্লাহর জন্য।’
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা: মুমিনকে সতর্ক থাকতে হবে- তার কাজ যেন কখনো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রশংসা বা স্বীকৃতি লাভের উদ্দেশ্যে না হয়। কাজের প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করা এবং পৃথিবীতে তার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।
হালাল কাজ করা: ইসলাম এমন কাজকে উৎসাহিত করে, যা বৈধ (হালাল) এবং যাতে কোনো প্রকার নিষিদ্ধ বা পাপের উপাদান নেই। একজন মুমিন সেই সব কাজ থেকে বিরত থাকে, যা আল্লাহতায়ালা নিষিদ্ধ করেছেন এবং নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত বৈধ পথেই চেষ্টা করে।
ক্ষতি ও কষ্ট থেকে বিরত থাকা: কোনো কাজ যদি নিজের বা অন্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়, তবে তা পরিহার করা উচিত। একজন মুমিন এমন কাজ বেছে নেবে যা তার শরীর, মন ও সমাজের জন্য কল্যাণকর। নিজের নিরাপত্তা ও সুস্থতা রক্ষা করা ইসলামেরই অংশ।
ইসলামি নীতিমালা অনুসরণ: একজন সত্যনিষ্ঠ মুমিন কাজের ক্ষেত্রেও ইসলামি নৈতিকতা অনুসরণ করে। সে অন্যদের প্রতি সদয় ও দয়ালু আচরণ করে, সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে কর্তব্য পালন করে এবং গিবত, পরচর্চা ও হিংসা থেকে বিরত থাকে- যা মুসলিম সমাজে বিভেদ ও ঘৃণা সৃষ্টি করতে পারে। এক হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলমান যদি একটি গাছ রোপণ করে, তবে সেই গাছ থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়; তা মানুষ খাক, পশু খাক বা পাখি খাক- সবই তার জন্য সদকা হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। এমনকি কেউ যদি তা থেকে কিছু চুরি করেও নেয়, তবু তা তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।’ -সহিহ মুসলিম: ১৫৫২
অতএব, ইসলামে কাজ শুধু জীবিকা অর্জনের উপায় নয়, এটি এক মহান ইবাদত যদি তা হয় বিশুদ্ধ নিয়তে, হালাল পথে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে।
