চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে যে হিংস্রতা দেখা দিয়েছে, তা হল পতিত ফ্যাসিবাদের এক নতুন রূপ। তিনি সব রাজনৈতিক দলকে একসাথে হয়ে এই অপশক্তির মোকাবিলায় নামার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন—“আসুন, অপশক্তির যেকোনো আস্ফালনকে শক্তভাবে প্রতিহত করি।”
চরমোনাই পীর আজ (বুধবার) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন; তার পক্ষে কেন্দ্রীয় প্রচার–দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ মিডিয়ায় বিবৃতিটি পাঠান। পীরের বক্তব্যে ছিল– দেশের মানুষের নিরাপত্তা এবং শান্তি রক্ষার জন্য এখন সকলেই সজাগ হতে হবে, কারণ পতিত ফ্যাসিবাদ আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে।
পীর বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ একেবারেই কোনো তুচ্ছ ঘটনা নয়; এটি সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাস, ককটেল হামলা ও গুপ্তহত্যার মতো ভয়ংকর কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ কেবল নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নয়—এটি যে কোনো সময়, যে কোনো আকারে আঘাত হানতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে উল্লেখ করেন, পতিত ফ্যাসিবাদ দেশে বসে সন্ত্রাস উস্কে দিচ্ছে; তাদের লক্ষ্য লোক ও সম্পদের চেয়ে দলীয় স্বার্থ রক্ষাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
পীর পুলিশের ভূমিকার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদের মধ্যে কোনো লোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতেই ইণ্ট্রুড হয়ে থাকতে পারে; এর জন্য বাহিনীকে সচেতন থাকতে হবে। পীর সবাইকে বলেছেন—এলাকা ভিত্তিক সমবায় ও সতর্কতা গড়ে তুলুন, যাতে পতিত ফ্যাসিবাদ ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাকে প্রতিহত করা যায়।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সাম্প্রতিক নিয়মনীতির বিষয়ে তাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলে ও থাকবে; কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। পীরের ভাষায়—“জুলাই সনদ কিংবা গণভোট নিয়ে আমাদের মতভেদ থাকতেই পারে; তবুও পতিত ফ্যাসিবাদকে রুখে দেবাই আমাদের সর্বোচ্চ দায়িত্ব।” আর্থাৎ রাজনৈতিক পার্থক্যকে পেছনে রেখে সবাইকে মিলেই পতিত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
পীরের বিবৃতিতে রয়েছে দৃঢ় সংহতি ও সতর্কতার বার্তা: পতিত ফ্যাসিবাদ সমাজে বিভাজন ও সহিংসতাকে জন্ম দেয়—এই ধারা জোরালো করার আগেই সামাজিক ঐক্য ও মন থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ জানিয়েছেন—রাজনৈতিক মঞ্চে কেউই পতিত ফ্যাসিবাদের কৌশল অনুসরণ করবে না; বরং সংসদীয় ও শান্তিপূর্ণ স্বরেই নিজেদের বাধ্যবাধকতা পালন করবে।
স্থানীয় পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক কমিটি ও নাগরিক সহযোগিতার ওপরও পীর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ স্থানীয় স্তরে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে; তাই স্থানীয় নেতাদের সতর্ক থাকতে হবে, এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজগুলো সক্রিয়ভাবে নিতে হবে। তিনি এই কথাও বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ কোন এক দলে সীমাবদ্ধ নয়—এটি নানা রঙে প্রকাশ পায়, তাই সবাইকে চায়ের টেবিলের আলোচনার বাইরে মাঠে নামতে হবে।
চরমোনাই পীরের আহ্বান ওপরে ওঠা রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামাজিক বিভাজনকে একসাথে মোকাবিলার অনুরোধ। তিনি সংগঠিতভাবে সতর্কতা নেওয়ার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন—এতে পতিত ফ্যাসিবাদের কোনো জায়গাই থাকবে না। তিনি আবারও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন—দেশ ও মানুষ প্রত্যেকেরই প্রথম приоритет হওয়া উচিত; দলীয় স্বার্থের খাতে যদি মানুষ ও দেশের নিরাপত্তা তুচ্ছ হয়, সেক্ষেত্রে সেটি কোনভাবেই বিবেচ্য নয়।
পীরের এই কণ্ঠস্বর এখন যে বার্তা পাঠাচ্ছে, তা হলো—পতিত ফ্যাসিবাদকে সহ্য না করে সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তাঁর বলতে কি, রাজনৈতিক বিভাজন যতই তীব্র হোক না কেন, পতিত ফ্যাসিবাদকে রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে—কারণ পতিত ফ্যাসিবাদ হলে সমাজের শান্তি ও মানুষদের মূল্যই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
