‘রকস্টার’ নির্মাণের মাধ্যমে ইমতিয়াজ আলীর ভাঙা হৃদয়ের স্বপ্ন তার কণ্ঠস্বর খুঁজে পেয়েছিলো। প্রায় ১৫ বছর পরেও সিনেমাটি মনে করিয়ে দেয় দিল্লির এক ছেলের গল্প যে তার হৃদয় ভেঙে একজন মহান শিল্পী হতে চেয়েছিল, সে যেন আজও এক স্পন্দনের মতো বেঁচে আছে ভালোবাসা ও বিশৃঙ্খলার সাউন্ডট্র্যাক হয়ে।
সুফি দর্শনের সেই ভাবনা থেকে অনুপ্রাণিত যে ভাঙা হৃদয়ই সৃষ্টিশীলতাকে জাগিয়ে তোলে। রকস্টার অনুসরণ করে জনার্দন ঝাখর নামের দিল্লির এক সাধারণ জাঠ সম্প্রদায়ের ছেলের যাত্রা। সংগীতশিল্পী হওয়া ছিলো তার স্বপ্ন। গল্পটি ধীরে ধীরে এগোয় একাধিক ফ্ল্যাশব্যাকে। জনার্দন ভালোবাসে সংগীতকে। জিম মরিসনের নাম শুনেছিলো আর সে এমন গান বানাতে চায় যা মানুষের আত্মাকে নাড়া দেবে কিন্তু সেই গোপন রহস্যটি তার নাগালের বাইরে রয়ে যায়।
তার কলেজ ক্যান্টিনের বন্ধুর কৌতুকপূর্ণ পরামর্শে, সে হীর (নার্গিস ফাখরি) নামক আভিজাত্য, স্বাধীনচেতা মেয়ের পেছনে ছুটতে শুরু করে। হীরের বিয়ের হওয়ার আগে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক হয়। কিন্তু যখন জনার্দনের হৃদয় ভেঙে যায়, তখন দিল্লির ছেলেটি অদৃশ্য হয়ে যায় এবং রকস্টার জর্ডানের জন্ম হয়।
জনার্দনের চরিত্রটি যে রকস্টার জর্ডানে পরিণত হয়- তা দিল্লির পিতমপুরার একটি ছোট্ট বসতি থেকে আসা ইমতিয়াজ আলীর এক জাঠ বন্ধু দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। আলী চরিত্রটিকে ‘বাজপাখির মতো’ বর্ণনা করেছেন, যার বুকে রয়েছে বেদনার আগুন এবং অস্থিরতা। তিনি নিঃশব্দের কষ্টগুলো বহন করেন, কখনও তা বের করার উপায় খুঁজে পান না। যা এ আর রহমানের দুর্দান্ত সংগীত গল্পের মূল শক্তি হয়ে ওঠে।
ছবিতে নার্গিস ফাখরির অসাধারণ অভিনয় সম্পর্কে বলেন ইমতিয়াজ। আমেরিকা থেকে সরাসরি নার্গিস ফাখরির সঙ্গে দেখা করুন। সিনেমাতে তিনি একটি মিষ্টি ‘কাশ্মিরী মেয়ের’ গল্প ফুটিয়ে তুলেন।
এ আর রহমানের জাদুকরী সুর নিয়ে বলেন, ‘রহমান স্যার যেন এই সংগীত শিল্পীর শরীরে প্রবেশ করেছেন। রকস্টারের বেদনার জন্য এ. আর. রহমানের সুর ও ইরশাদ কামিলের কবিতার জাদুকরী সংমিশ্রণটি একেবারে নিখুঁতভাবে কাজ করেছিল।
রহমান জর্ডানের কণ্ঠ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন মোহিত চৌহানকে। ‘কুন ফায়া কুন’ শুনলে প্রতিবারই শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। এরপর আসে ‘সাড্ডা হক’-এর উন্মাদনা, যা ধীরে ধীরে গড়ে তোলে উড়ন্ত ‘নাদান পারিন্দে’তে। আর অবশ্যই, ‘কাটিয়া কারু’র হীরের কৌতুকপূর্ণ মাধূর্য ধরা পড়েছে, সবগুলোই কালজয়ী প্রিয় গান।
তবে এ ইমতিয়াজ আলী প্রথমে গানটি নিয়ে বলেন, ‘এই সংগীত কাজ নাও করতে পারে।’ কিন্তু পরে যখন তিনি দেখলেন রণবীর সেই সংগীতকে প্রাণ দিচ্ছে। একজন শিল্পীর ভিতরের কষ্ট এত নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলছে, তখন তিনি সম্পূর্ণ মুগ্ধ হয়ে যান।
২০১১ সালের ১১ নভেম্বর (১১/১১/১১) এক কবিতার মতো তারিখেই ইমতিয়াজ আলির রকস্টার মুক্তি পায়। সিনেমাটির মতোই তারিখটিও ছিল ছন্দময়। রকস্টারের জন্য রণবীর কাপুর তার প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু ছবিটির আসল সাফল্য হলো- এর সংগীত, যা এখনও বেঁচে আছে। এখনও মনে দোলা দেয় সংগীত প্রেমীদের, তারা সেই সুরের অতলে হারিয়ে যান।
