গাজীপুর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক পান্না
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় প্রায় আড়াই মাস কারাভোগ শেষে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম (পান্না) জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট–১ থেকে মুক্ত হন।
কারাগার সূত্র জানায়—জামিনের নথি উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালতে এসে পৌঁছানোর পর, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কারা কর্তৃপক্ষের হাতে আসে। কাগজপত্র যাচাই–বাছাই শেষে বিকেলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা সন্ধ্যার আগেই তাঁকে কারাগার প্রাঙ্গণ থেকে নিয়ে যান।
মামলার পটভূমি: সাবেক মন্ত্রী–অধ্যাপকসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়।
রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম মামলার বাদী।
ওই দিন সকালে অভিযুক্তরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন।
এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
গোলটেবিল আলোচনার ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান, উত্তেজনা
ডিআরইউ–তে আলোচনা চলাকালে অধ্যাপক হাফিজুর রহমানের বক্তব্য শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মিছিলসহ একদল বিক্ষোভকারী হলরুমে প্রবেশ করে।
তারা স্লোগান দিতে থাকে—
- “জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”
- “লীগ ধর, জেলে ভর”
- “জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও, লড়াই করো”
এরপর বিক্ষোভকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে অংশগ্রহণকারীদের ঘিরে ফেলে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ডিএমপির একটি দল সেখানে পৌঁছায়।
বিক্ষোভকারীরা পরে লতিফ সিদ্দিকী, অধ্যাপক হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ
এই মামলায় গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সুরক্ষা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
আরএসএফ দাবি করেছিল—সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ‘বিপন্ন করার মতো’ এই গ্রেপ্তার অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।
জামিনে মুক্তি—কিন্তু তদন্ত চলছে
জামিন পেয়ে মুক্ত হলেও মামলার তদন্ত এখনো চলছে। পুলিশ বলছে, গোলটেবিল আলোচনার স্থলে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার পেছনে কারা ছিলেন এবং কার কী ভূমিকা ছিল—সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম মুক্তি পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও মামলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
