রাজধানীতে নৃশংস হত্যাকাণ্ড – রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার
রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সামনে পাওয়া যায় দুই ড্রামে ভরা ২৬ টুকরা মরদেহ—পরবর্তীতে শনাক্ত করা হয় যে এগুলো রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২)-এর দেহাংশ।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আলোচনার ঝড় ওঠে, আর রহস্যজনক এ মামলার মূল আসামি জারেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামীমাকে অবশেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে।
ডিবি ও র্যাব–৩ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
হত্যার পর খণ্ডিত করে ড্রামে ভরে ফেলা – জারেজুলের ভয়াবহ পরিকল্পনা
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জানায়—
আশরাফুল হকের হত্যার পেছনে ছিলেন তার ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ জারেজুল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে, পরকীয়া ও সম্পর্কের জটিলতা থেকেই এ হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত।
জারেজুল কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেফতার হয়। তার সঙ্গে থাকা প্রেমিকা শামীমাকেও র্যাব–৩ গ্রেফতার করে, এবং তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ আলামত।
জাতীয় ঈদগাহের সামনে দুই ড্রাম – এক বিভৎস দৃশ্য
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সামনে দুটি নীল ড্রাম দেখতে পায় পুলিশ।
ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় ২৬ খণ্ডিত মরদেহ—যা মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় এলাকাজুড়ে।
পরবর্তীতে ডিএনএ ও পরিবারের নিশ্চিতকরণে জানা যায়, মরদেহটি রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের।
বন্ধুর হাতে নির্মম মৃত্যু – কীভাবে খুন হলো আশরাফুল?
ডিবির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী—
- জারেজ ও আশরাফুলের মধ্যে দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল
- শামীমা নামে এক নারীর সঙ্গে জারেজের পরকীয়া–সম্পর্ক নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়
- সেই দ্বন্দ্ব থেকেই পরিকল্পিত ভাবে হত্যা
- হত্যার পর মরদেহ খণ্ড–বিখণ্ড করা হয়
- প্রমাণ গোপন করতে ড্রামে ভরে রাজধানীতে এনে ফেলে রাখা হয়
এই পুরো প্রক্রিয়া জারেজ একাই করেননি—প্রেমিকা শামীমাও সহায়তা করেছেন বলে তদন্তে ধারণা পাওয়া গেছে।
পরিবার মামলা করে, তদন্তের গতি বাড়ে
নিহত আশরাফুলের পরিবার ঘটনার পরদিনই শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে।
মামলার নামীয় আসামি ছিল জারেজুল ইসলাম, তার বন্ধু পরিচয়েই যাকে আশরাফুল বিশ্বাস করতেন।
মামলা দায়েরের পরই গোয়েন্দা বিভাগ ও র্যাব যৌথভাবে তদন্ত শুরু করে এবং দ্রুতই দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়।
ড্রামের টুকরো থেকে পুরো রহস্য – তদন্তকারীদের ভাষ্য
ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—
“ড্রামের ভেতর যে ভাবে মরদেহ কাটা ছিল, তা একেবারেই অস্বাভাবিক ও পেশাদারির ছোঁয়া নেই। ঘটনাটি ছিল নরপিশাচের মতো নির্মম।”
তাদের মতে:
- খুনটি হয়েছে ব্যক্তিগত ঘৃণা ও সম্পর্কগত টানাপড়েনের কারণে
- মরদেহ টুকরো করার উদ্দেশ্য ছিল পরিচয় গোপন করা
- পরে ড্রাম শহরের ব্যস্ত এলাকায় ফেলে রেখে পালানোর চেষ্টা
র্যাব–৩ এর অভিযান—গ্রেফতার শামীমা
র্যাব–৩ জানায়—
জারেজের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা শামীমা এই হত্যার একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র।
তাকে গ্রেফতারের সময় গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো মামলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
র্যাবের দাবি:
- শামীমা পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছেন
- তার মোবাইল ও কললিস্টে পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র
- খুনের পর মরদেহ সরাতে সহায়তার প্রমাণ মিলেছে
নিহত আশরাফুল – একজন সফল ব্যবসায়ী, পরিণতি হলো ভয়াবহ
রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক ছিলেন সবার কাছে ভদ্র ও পরিচিত মুখ।
তার পরিবার জানায়—
“জারেজ ছিল আশরাফুলের সবচেয়ে বিশ্বাসের মানুষ। তাকে সে ভাইয়ের মতো মনে করত। সেই মানুষটিই যে খুন করবে, কেউ ভাবেনি।”
পরিবারের সদস্যরা এখন বিচার দাবি করছেন এবং দ্রুত তদন্ত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পুলিশের মতে “সম্পর্কজনিত টানাপড়েনেই খুন”
ডিএমপি গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন—
“এটি পরকীয়া কেন্দ্রীক একটি হত্যাকাণ্ড।
অভিযুক্ত জারেজ ও শামীমা দুজনেই প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।”
তদন্ত আরও বিস্তৃত হচ্ছে
তদন্তকারীরা আরও বলছেন—
- খুনের স্থান কোথায় ছিল?
- মরদেহ কবে ও কোথায় খণ্ডিত হয়?
- ড্রাম কোথা থেকে আনা হয়েছিল?
- অন্য কেউ যুক্ত ছিল কি না?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ডিবি।
