শীতের শুরুতে ঢাকার বাজারগুলোতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, কচুর লতি, শসাসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি যখন আসতে শুরু করল, তখন ধারণা ছিল—সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক উল্টোটা। এখন বাজারে সবজি পাওয়া গেলেও তার দাম বেড়েছে অন্তত ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। কিছু পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি আরও বেশি।
মাসের শুরুর দিকে যে সবজি ৫০–৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল, এখন সেই একই সবজি ৭০–৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, বন্যা, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং সরবরাহ কমে যাওয়াকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতাদের মতে, “শীতের সবজির দাম কমার কথা ছিল, বাড়ছে কীভাবে?”
শীতের সবজির দাম হঠাৎ এমন বাড়ল কেন?
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ঢেঁড়স, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দল—এগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০–৮০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেই এগুলোর দাম ছিল ৫০–৬০ টাকা।
ফুলকপি ও বাঁধাকপি, যেগুলো শীতের শুরুতেই বাজারে আসে, এগুলোও দামে বেড়েছে।
গত সপ্তাহে প্রতিটি ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া ফুলকপি ও বাঁধাকপি এখন ৪০–৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যান্য সবজির পরিস্থিতিও একই রকম:
- বরবটি: আগে ৯০ → এখন ১০০ টাকা
- লাউ: আগের মতোই ৬০ টাকা
- মরিচ: ১২০ টাকা অপরিবর্তিত
কিন্তু সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে শিমে। শিমের দাম লাফিয়ে ৭০–৮০ টাকা থেকে সরাসরি ১৪০ টাকাতে পৌঁছেছে।
লম্বা বেগুন ৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৮০ টাকা। সবুজ গোল বেগুন ৪০ টাকা বাড়ায় এখন এর দাম ১২০ টাকা কেজি। তাল বেগুন এখনো ১৪০ টাকায় স্থির রয়েছে।
কচুর লতি, শসা, উচ্ছে—বাজারে আরও বাড়তি চাপ
উচ্ছে কেজি ১১০ টাকা, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৪০ টাকা বেশি।
শসা ৫০–৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কচুর লতি ৬০ → এখন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুলা ৪০ → এখন ৫০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
একই সাথে বাজারে দেখা গেছে—অনেক চিঠি বা কাগজপত্র ফেরত যাওয়ার মতোই সবজির দামও যেন বারবার বেড়ে ফিরে আসছে ক্রেতাদের ওপর।
একজন ক্রেতা আনিসুর রহমান হতাশ হয়ে বলেন,
“শীতের সবজির দাম কমার কথা ছিল ধীরে ধীরে, কিন্তু সবকিছুর দাম উল্টো বাড়ছে। এটা কেমন বাজার!”
আমদানি করা পণ্যেও দাম বেড়েছে
শুধু দেশি উৎপাদিত সবজি নয়, আমদানি করা পণ্যেও মূল্যবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
- বিদেশি টমেটো: ১১০ → এখন ১২০ টাকা
- আমদানি করা গাজর: ১৩০ → এখন ১৫০ টাকা
এদিকে পেঁপে এখনও ক্রেতাদের জন্য সস্তার সবজি। বাজারে এটি কেজিপ্রতি ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বিক্রেতাদের ব্যাখ্যা: বন্যা, বৃষ্টি ও কম উৎপাদন
সবজি বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন জানান,
“শিম খুব কম এসেছে, তাই দাম বেশি। এ বছরের বন্যা আর বৃষ্টিপাতে অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। যে কারণে উৎপাদন এবং সরবরাহ দুটিই কম।”
তিনি আরও বলেন, “বাজারে অনেক সবজি আগের চেয়ে কম এসেছে। তাই দাম বাড়ছে।”
আলু-পেঁয়াজে বাড়তি চাপ
সবজির সঙ্গে আলু-পেঁয়াজের দামও স্থির নেই।
- আলু এক সপ্তাহে ২০ → এখন ২৫ টাকা কেজি
- পেঁয়াজ কারওয়ান বাজারে ১১৫ টাকা
- পাড়া-মহল্লায় ১২০ টাকা
বিক্রেতা নাজমুল হাসান বলেন,
“পুরোনো আলু কমে গেছে। নতুন আলু উঠলে পুরোনো আলুর দাম আরও বাড়বে।”
আদা-রসুনে স্থিতিশীলতা, ডিমের দামে সামান্য স্বস্তি
বাজারে আদা-রসুনের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল:
- চায়না রসুন: ১৬০ টাকা
- দেশি রসুন: ৮০–১০০ টাকা
- থাই আদা: ২০০ টাকা
- চায়না আদা: ১৮০ টাকা
ডিমের দাম কিছুটা কমেছে:
- লাল ডিম ডজন ১৩০ → এখন ১২৫ টাকা
হালির দাম এখনও ৪৫ টাকা।
মুরগি ও মাংস—এখানে নেই বড় ধরনের পরিবর্তন
বাজারে ব্রয়লার মুরগি এখনও কেজিপ্রতি ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোনালি মুরগি ২৭০–২৮০ টাকায়, হাইব্রিড সোনালি ২৪০–২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১২০০ টাকা, ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা কেজি—দাম অপরিবর্তিত।
চালের বাজার—উচ্চমূল্যে স্থিরতা
সবজির বাজারে অস্থিরতা থাকলেও চালের বাজারে রয়েছে স্থিতিশীলতা। তবে দাম কিন্তু কম নয়।
পাইকারিতে কোনো চাল ৫৮ টাকার নিচে নেই।
খুচরায় ৬০–৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইজাম ও আটাশ চাল পাইকারিতে ৫৮–৬০ টাকা, মিনিকেট ৭৬–৮০ টাকা—খুচরায় আরও ৫ টাকা বেশি।
সার্বিক চিত্র: কেন শীতের সবজির দাম বাড়ছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন—
- উৎপাদন ক্ষতি
- মৌসুমি সবজির কম সরবরাহ
- পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি
- বন্যা ও বৃষ্টির কারণে মাঠে ক্ষতি
এসব মিলেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
যেখানে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারা কম দামে সবজি পাবেন বলে ভেবেছিলেন, সেখানে এখন উল্টো চাপ বাড়ছে পরিবারিক বাজেটে।
