যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে সরকারি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি ‘স্ন্যাপ’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অভাবগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে স্থানীয় ফুড ব্যাংক ও বিতরণকেন্দ্রগুলোতে চাপ সামলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সংকটময় সময়ে দরিদ্র মানুষের ক্ষুধা লাঘবে অরোরার একটি মসজিদ এগিয়ে এসেছে সহায়তার হাত বাড়িয়ে।
কলোরাডোর অরোরা শহরের অন্যতম খাদ্য সহায়তা কেন্দ্র আনসার প্যান্ট্রি অরোরা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অভূতপূর্ব চাপের মুখে পড়েছে। ‘স্ন্যাপ’ সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক নিম্নআয়ের পরিবার হঠাৎ করেই সহায়তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবকদের।
এই অবস্থায় স্থানীয় পরিবারগুলো যেন অভুক্ত না থাকে—এ লক্ষ্যেই জরুরি ত্রাণ উদ্যোগ নিয়েছে অরোরা ইসলামিক সেন্টার। মসজিদটি তাদের নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করছে এবং পাশাপাশি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় থেকেও অনুদান সংগ্রহ করছে। মসজিদের সহায়তায় আনসার প্যান্ট্রির বিতরণ কার্যক্রম আরও সক্রিয় হয়েছে।
মসজিদের উদ্যোগ: মানবিক সহযোগিতাই এখন বড় শক্তি
জুমার খুতবায় অরোরা ইসলামিক সেন্টারের ইমাম আবদুর রহিম খান বলেন,
“মানুষের প্রয়োজন এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আমাদের একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে। যৌথ উদ্যোগ ও সহযোগিতাই এই সংকটে টিকে থাকার প্রধান শক্তি।”
তিনি আরও বলেন,
“আমাদের অনেক ভাই-বোন রাস্তায় ঘুরছেন। কিছু পরিবার সত্যিই অভুক্ত। স্ন্যাপ সুবিধা বন্ধ হওয়ার পর থেকে আনসার প্যান্ট্রিতে ভিড় অসহ্য রকম বেড়েছে, কিন্তু খাবারের সরবরাহ যথেষ্ট নয়। মানুষ কষ্টে আছে।”
আনসার প্যান্ট্রি বহু বছর ধরে অরোরা শহরের কলফ্যাক্স অ্যাভিনিউয়ের লারেডো ও নরফোক এলাকার মাঝামাঝি স্থানে পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের কাছে এটি একটি নির্ভরযোগ্য খাদ্য সহায়তা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
৫০০ ডলারের খাদ্যসামগ্রী দান, আরও অনুদানের আহ্বান
মসজিদের বোর্ড সদস্য জানিস রাইন জানান,
“সম্প্রদায়ের মানুষ এখন সত্যিকার অর্থেই সাহায্য চায়। তাই আমরা জরুরি তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তিনি নিশ্চিত করেছেন যে মসজিদটি আনসার প্যান্ট্রিকে ৫০০ ডলারের নিত্যপ্রয়োজনীয় ও শুকনো খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
রাইন বলেন,
“দান শুধু মুসলমানের দায়িত্ব নয়; একজন ভালো আমেরিকান হওয়ারও পরিচয়। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, সবাইকে সামনে আসতে হবে।”
নিঃস্বার্থ মানবসেবা—ধর্মীয় দায়িত্ব
মসজিদের একজন সদস্য আমিন হানিশ বলেন,
“আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহই রিজিকদাতা। তাই প্রথম কাজ হলো তার কাছে দোয়া করা। দ্বিতীয়ত, তিনি যে সামর্থ্য দিয়েছেন—তা দিয়ে মানুষের উপকার করা।”
তিনি আরও বলেন,
“মুসলমান হিসেবে আমাদের শুধু নিজেদের নয়, প্রতিবেশী, অমুসলিম বা যে কোনো অভাবী মানুষের প্রতিও দায়িত্ব আছে। মানবসেবাই আমাদের প্রকৃত শিক্ষা।”
কীভাবে সহায়তা করা যাবে?
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, সবচেয়ে কার্যকর সহায়তা হলো আর্থিক অনুদান। তবে যারা চাইবেন, তারা খাদ্যসামগ্রী বা সময় দিয়েও অংশ নিতে পারেন।
প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে অরোরার ইস্ট কলফ্যাক্স অ্যাভিনিউয়ের ১৬২৫১ নম্বর ঠিকানায় সহায়তা গ্রহণ করা হয়।
শুধু অরোরা নয়—সারা কলোরাডো জুড়ে ধর্মীয় সংগঠনের সহযোগিতা
সংকট শুধু অরোরাতেই নয়। কলোরাডো জুড়ে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে নানান উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। মুসলিম সম্প্রদায়ও এগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনও তাদের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে।
ইন্ডিয়ানা পলিসের মসজিদ আল ফাজরে আগে মাসে একবার খাদ্য বিতরণ করা হলেও এখন তা প্রতি শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবকেরা আশা করছেন, স্ন্যাপ সুবিধা বন্ধ ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে অন্তত ২০০ পরিবারকে সাপ্তাহিক খাদ্য সহায়তা দিতে পারবেন।
মানবতার ডাকে সাড়া
এই উদ্যোগগুলো পরিষ্কারভাবে একটি বার্তা দিচ্ছে—
মসজিদ শুধু ধর্মীয় ইবাদতের স্থান নয়, বরং সংকটে মানবতার পাশে দাঁড়ানোর অন্যতম নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র।
যখন পরিবারগুলো ক্ষুধার মুখে দিন কাটাচ্ছে, তখন ধর্মীয় ও কমিউনিটি সংগঠনগুলোই হয়ে উঠছে তাদের শক্ত আশ্রয়।
এই মানবিক কার্যক্রমগুলো প্রমাণ করছে—সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হলে ধর্ম, বর্ণ বা পরিচয়ের সীমা নেই।
মানবসেবা আজ একটি গভীর প্রয়োজন, আর অরোরা মসজিদের এই উদ্যোগ তা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিল।
