২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর—বাংলাদেশের উপকূলীয় মানুষ আজও ভুলতে পারেনি সে দিনের ভয়াল রাতটিকে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর তছনছ করে দিয়েছিল মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, জীবিকা আর হাজারো পরিবার। ১৭ বছর পার হলেও সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও বুকের ভেতর কাঁটার মতো বিঁধে আছে স্বজনহারা মানুষের।
দুই সন্তানের লাশ বুকে চেপে রাখতে না পারার ব্যথা আজও তাড়া করে
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামের লাভলী বেগম (৫৫)—সিডরের কথা শুনলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ভেসে যায় তার দুই সন্তান—রুবেল (১১) ও তন্বী আক্তার (৩)।
লাভলী বেগম বলেন,
“রাতেই পানি ঢুকে পড়ল ঘরে। কিছু বোঝার আগেই শিশু দুটো স্রোতে ভেসে গেল। সারারাত খুঁজে পাইনি। পরদিন তিন কিলোমিটার দূরে এক বাড়ি থেকে ওদের লাশ পেলাম।”
তিনি আরও বলেন,
“সন্তান হারানোর কষ্ট কী—যার যায় সে-ই বোঝে। আজও ওদের কবরের পাশে দাঁড়ালে বুকটা হু হু করে ওঠে।”
২৬০–৩০৫ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালায় সিডর
সেদিন সিডরের মূল ঘূর্ণিঝড় উপকূল আঘাত হানে ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে। দমকা হাওয়া ছিল আরও ভয়ংকর—ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
এতে ১৫–২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়ে পুরো উপকূলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল।
পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ওই উপজেলায়ই ৪৪৯ জনের প্রাণহানি ঘটে।
“আমরা আজও ভুলতে পারিনি”—উপজেলা প্রশাসন
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন,
“সিডরের ক্ষতি এত গভীর ছিল যে উপকূলের মানুষ আজও সেই ভয়াবহতা ভুলতে পারেনি। প্রতিটি ঘরে হতাশা, শোক আর হারানোর বেদনা রয়ে গেছে।”
গবেষকের সতর্কবার্তা: উপকূল রক্ষায় জরুরি পরিকল্পনা প্রয়োজন
উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন জানান,
“সিডর থেকে শুরু করে প্রতিটি উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়ে যে পরিমাণ প্রাণহানি ও ক্ষতি হয়, তা কখনো পূরণ করা যায় না। উপকূলকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ, বনাঞ্চল বৃদ্ধি, ও জলবায়ু সহনশীল বাড়িঘর নির্মাণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা বাড়ানো না গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতির ঝুঁকি আছে।”
তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,
“উপকূলকে রক্ষার উদ্যোগ এখনই নেওয়া জরুরি।”
