বিভিন্ন প্রয়োজনে মুসলমানদের অমুসলিমদের সঙ্গে চলাফেরা করতে হয়—অফিস, স্কুল, কর্মক্ষেত্র বা সামাজিক জীবনে। অনেক সময় একসঙ্গে পানাহারও ঘটে, এমনকি একই পাত্রে পানি পান করারও পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই ক্ষেত্রে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে—অমুসলিমের ঝুটা পানি কি নাপাক বা অপবিত্র? তা কি পান করা নিষিদ্ধ?
দেশের জনপ্রিয় ইসলামী গবেষণাধর্মী পত্রিকা মাসিক আল কাউসার এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে। পত্রিকাটিতে বলা হয়েছে, “অমুসলিমের ঝুটা পানি নাপাক—এ ধারণা সঠিক নয়। শরিয়তের নির্ধারিত নাপাকির কারণ ছাড়া সাধারণ অবস্থায় অমুসলিমের লালা বা স্পর্শকে নাপাক ধরা যায় না। তাদের ঝুটা পানিও নাপাক নয়। প্রয়োজনের সময় একই পাত্র থেকে পানি পান করতে কোনো অসুবিধা নেই।”
কোরআনের দৃষ্টিকোণ
কোরআনে মুশরিকদেরকে ‘নাজিস’ বা নাপাক বলা হয়েছে, তবে তা বিশ্বাস ও আকিদার অপবিত্রতার অর্থে, শারীরিক নাপাকি বোঝাতে নয়।
তাফসিরে ইবনে কাসিরে (সুরা তাওবা: আয়াত ২৮) বলা হয়েছে—
“এখানে নাজিস বলা হয়েছে তাদের অন্তরের অপবিত্র বিশ্বাসের জন্য; তাদের শরীর বা লালা নিজে থেকে নাপাক নয়।”
অতএব, কোরআনের দৃষ্টিতেও অমুসলিমের শরীর বা তাদের পান করা পানি নাপাক নয়, যতক্ষণ না সেখানে কোনো দৃশ্যমান নাপাকি (যেমন: মদ, রক্ত বা অন্যান্য অপবিত্র বস্তু) মিশে যায়।
ইসলামী আচরণ ও সীমারেখা
তবে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে—অমুসলিমদের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব, তাদের ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হওয়া অনুচিত। কিন্তু সামাজিক ও মানবিক কারণে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা, প্রতিবেশীর অধিকার আদায় করা, প্রয়োজনে লেনদেন করা এবং একসঙ্গে বসে খাওয়া-পান করা—এসব শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ।
মাসিক আল কাউসার–এর ভাষায়, “অমুসলিমদের সঙ্গে মহব্বতের সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও, তাদের প্রতি ন্যায়, মানবিকতা ও সহানুভূতির আচরণ করায় কোনো নিষেধ নেই।”
সারসংক্ষেপ
- অমুসলিমের ঝুটা পানি বা খাবার নিজে থেকেই নাপাক নয়।
- নাপাকি প্রমাণিত না হলে তা থেকে বিরত থাকার প্রয়োজন নেই।
- কোরআনে ‘নাজিস’ বলা হয়েছে বিশ্বাসগত কারণে, শারীরিক কারণে নয়।
- সামাজিক প্রয়োজন ও মানবিক কারণে একসঙ্গে পানি পান করা শরিয়তসম্মত।
