সিলেট নগরের বালুচর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে এক যুবক মো. ফাহিম (২৩) আজ বুধবার সকালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের তথ্য মতে, নিহত ফাহিমের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কান্দিগাঁও গ্রামে। তিনি সিলেটে ভাড়া বাসায় থাকতেন, বাড়ির সঙ্গে নয়, নতুন পরিবেশে ভাড়া নিয়েছিলেন বালুচর এলাকায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ফাহিমের বড় ভাই মো. মামুন আহমেদ (২৫) ছাত্রলীগসহ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং এলাকায় ‘বুলেট মামুন গ্রুপ’ নামে পরিচিত একটি কিশোর গ্যাংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। গত ১০ অক্টোবর মামুন ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামুনের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনসহ ১১টি মামলা রয়েছে। মামুন কারাগারে যাওয়ার পর, ছোট ভাই ফাহিম বালুচর এলাকায় গ্যাং নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংয়ের সঙ্গে বিবাদ দেখা দেয়, যা শেষ পর্যন্ত হিংস্র সংঘর্ষে রূপ নেয়।
হামলার দিন সোমবার বালুচর এলাকায় ফাহিম একা অবস্থায় ছিলেন। একপক্ষীয় হামলায় ধারালো অস্ত্র প্রয়োগ করা হয়—মাথা ও হাতে ঘায়েল হন তিনি। এরপর দ্রুত তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় চিকিৎসার পর শারীরিক অবস্থায় কিছুটা উন্নতি হলে দেয়। কিন্তু সিলেট ফেরার পথে ভোররাতে তার শারীরিক অবস্থা নিয়োজনীয়ভাবে খারাপ হয় এবং আজ সকালে হাসপাতালে মৃত্যুর ঘোষণা দেয়া হয়।
সিলেটের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন জানিয়েছেন, কিশোর গ্যাং আধিপত্য নিয়ন্ত্রণকে ঘিরে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতিও ঘটতে পারে।
স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম সাধারণত চুপিচুপি শুরু হয়—প্রারম্ভে ছোটখাটো হয়, পরে এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করে। ভাড়া বাসায় থাকা ফাহিম হয়তো সেই নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে आगे এগিয়েছিলেন। তার মৃত্যু সেই নিয়ন্ত্রণ সংগ্রামের পরিণতির রূপ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কিশোর গ্যাং আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে শহরাঞ্চলে—বিশেষ করে যেসব এলাকায় ক্রিয়াশীলতা কম প্রশাসনিক নজরদারিতে হয়। এমন একটি ঘটনায় একজন তরুণের প্রাণ হারানো দৃষ্টান্তমূলক। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
উপসংহারে বলা যায়—সিলেটে ‘কিশোর গ্যাং আধিপত্য’ নিয়ে আজ একটি জীবন শেষ হয়েছে। এই ঘটনা কেবল এক নিখুত হত্যাকাণ্ড নয়; এটি যুব অপরাধ, সামাজিক নিয়ন্ত্রণহীনতা ও নিরাপত্তার সংকটের একটি প্রতিফলন। শিশু-তরুণদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়তে এখন সময় নীরব বসে থাকার নয়—সক্রিয় এলাকায় প্রশাসন, পরিবার ও কমিউনিটি একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
