দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল রাজনৈতিক সমঝোতা।
কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সেই আশা এখন সুদূরপ্রসারী।
অনেকে ভেবেছিলেন, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদল আসবে—আচরণে পরিশীলন, সহনশীলতা, মতবিরোধে সংলাপের পথ তৈরি হবে।
বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।
বরং বিচারপ্রক্রিয়ার দিন ঘনিয়ে আসতেই সামনে এসেছে পুরোনো দিনের অস্থিরতার ছায়া—
লকডাউনের নামে আগুন দেওয়া, বোমাবাজি, উত্তেজনা সৃষ্টি—এগুলো আবার দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বল অবস্থান শঙ্কা বাড়াচ্ছে
৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হতে পারেনি।
ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে।
কেউই নিশ্চিত নন—আগামী দিনের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।
এই অস্থিরতা বাড়ছে দুটি কারণে—
একটি হলো সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর বিচারকে ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা,
অন্যটি হলো নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মুখোমুখি অবস্থান তীব্র হওয়া।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের নৈপুণ্যের অভাব এবং নিজেদের প্রতি আস্থাহীনতা স্পষ্ট বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
জনগণকে আস্থা দিতে সরকারের “কঠিন বার্তা” অনুপস্থিত
যে মুহূর্তে দেশের মানুষ নিশ্চয়তা ও দিকনির্দেশনা চায়,
সে সময়ে সরকারের কাছ থেকে জোরালো, দৃশ্যমান, কঠোর বার্তা আশা করা হয়েছিল।
যেমন—
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দৃঢ় ঘোষণা, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, আইন-শৃঙ্খলার ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ।
কিন্তু সরকার সেই প্রত্যাশিত বার্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এর ফলে অপরাধী ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা আরও সাহসী হয়ে উঠছে।
তারা জানে, শাস্তির ভয় কম—বাড়ছে বেপরোয়া আচরণ।
মাঠপর্যায়ে সহিংসতার বিস্তার
বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে—
হত্যা, খুন, গণপিটুনি, প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, বোমা-অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা।
এমনকি নতুন সরকারও পুরোনো সময়ের মতো যেকোনো ঘটনার পর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পরিবর্তে “নিজেদের অবস্থান” ব্যাখ্যা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
যা একসময় স্বৈরাচারী সরকারের একচেটিয়া বৈশিষ্ট্য ছিল।
এই ধরনের বক্তব্য বা আচরণ অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করে তোলে,
কেননা তারা মনে করে—ব্যবস্থার ফাঁকফোকর আছে, পালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
জনগণকে সম্পৃক্ত না করলে নিরাপত্তাবলয় তৈরি হয় না
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেষ্টনী তৈরি করতে হয়।
সেখানেই সরকারের বড় ঘাটতি রয়েছে।
যেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কথা — সেখানে দেখা যাচ্ছে দূরত্ব।
যেখানে স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি নিরাপত্তা গড়ে তোলার কথা — সেখানে প্রচেষ্টা নেই বললেই চলে।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান মনে করেন—
সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আরও প্রজ্ঞামূলক ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শুধু বক্তব্য নয়, প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক প্রস্তুতি এবং জনগণের ওপর আস্থা পুনর্নির্মাণ।
