রাজধানীর বাজারগুলোতে ইতোমধ্যেই শীতের নানা শাকসবজির দেখা মিললেও দাম কমেনি, বরং আবারও বেড়েছে—এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। গত কয়েক মাসে একবার কমার ইঙ্গিত মিললেও চলতি সপ্তাহে আবারও বাড়তে শুরু করেছে শীতকালীন সবজির দাম।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) নিউমার্কেট, হাতিরপুল, কলমিলতা, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ সবজি এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু সবজির দাম আরও বেশি, কিছু পণ্য আবার হঠাৎ করে বাড়তি দামে ফিরে এসেছে।
ক্রেতারা বলছেন—
“সবজি, পেঁয়াজ, মরিচ—সব কিছুর দাম একসাথে বাড়লে মাসের হিসাব মেলানো অসম্ভব হয়ে যায়।”
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন—
“দুই মাস ধরে সবজির দাম বেশি। শীতকালীন সবজি বাজারে এলেও দামের তেমন পরিবর্তন নেই।”
শীতকালীন সবজির মজুত বাড়লেও কমেনি দাম
যদিও বাজারে এখন ফুলকপি, টমেটো, গাজর, শিম, পটোলসহ সব ধরনের শীতের সবজি পাওয়া যাচ্ছে, তবুও দামের দিক থেকে স্বস্তি ফিরছে না।
সবজির হালনাগাদ দাম:
- টমেটো: ১০০–১৪০ টাকা কেজি
- গাজর: ১৪০ টাকা কেজি
- শিম: ১২০–১৪০ টাকা কেজি
- বেগুন: ১০০ টাকা কেজি
- করলা: ১০০ টাকা কেজি
- বরবটি: ১২০ টাকা কেজি
- ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পটোল: ৮০ টাকা কেজি
- ফুলকপি: প্রতি পিস ৫০ টাকা
- বাঁধাকপি: প্রতি পিস ৫০ টাকা
- লাউ: ৭০–৮০ টাকা পিস
- মুলা: ৬০ টাকা কেজি
- ঢেঁড়শ: ৮০ টাকা কেজি
- শসা: ৮০ টাকা কেজি
শীতের সবজি বাজারে আসার পর দাম কমবে—এমন প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র।
পেঁয়াজের বাজারেও আবার আগুন
নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। অথচ দাম কমার বদলে আরও বেড়েছে।
পেঁয়াজের দাম:
- স্থানীয় পেঁয়াজ: ১২০–১৩০ টাকা কেজি
- কাঁচা মরিচ: ১৬০ টাকা কেজি
বিক্রেতাদের ভাষায়—
“সরবরাহ ঠিক থাকলেও পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে আমাদের কিছু করার থাকে না।”
মুরগি, ডিম ও মাছ-মাংসের বাজারে স্থিতিশীলতা
সবজির বাজার অস্থির হলেও মুরগি ও ডিমের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল।
ডিমের দাম কমেছে:
- প্রতি ডজন লাল ডিম: ১৩০ টাকা
- প্রতি ডজন সাদা ডিম: ১২০ টাকা
মুরগির দাম:
- ব্রয়লার: ১৮০–২০০ টাকা কেজি
- সোনালি: ২৮০–৩০০ টাকা কেজি
- লাল লেয়ার: ২৫০ টাকা কেজি
- দেশি মুরগি: ৫৫০–৬০০ টাকা কেজি
গরু-খাসি:
- গরুর মাংস: ৭৬০–৮০০ টাকা কেজি
- খাসির মাংস: ১২০০ টাকা কেজি
- ছাগলের মাংস: ১১০০ টাকা কেজি
কেন কমছে না শীতকালীন সবজির দাম?
বিক্রেতারা বলছেন—
- পরিবহন ব্যয় বেড়েছে
- পাইকারি বাজারে দাম অস্থিতিশীল
- ঠান্ডা বাড়ার আগে পর্যন্ত সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয় না
- কিছু কৃষিপণ্য দেশে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি
অন্যদিকে ক্রেতারা মনে করছেন—
- সিন্ডিকেট ও মজুতদারির কারণে দাম কমছে না
- হঠাৎ করে কিছু সবজির দাম দ্বিগুণ হওয়া অস্বাভাবিক
একজন ক্রেতা বলেন,
“ফুলকপি আর বাঁধাকপি ৫০ টাকা হলেও বাকি সবজির দাম বেশি। পুরো মাসের বাজার সামলানো কঠিন।”
বাজারের সম্ভাব্য দামের পরিবর্তন
বিক্রেতারা জানান—
“আগামী সপ্তাহে শীত পুরোপুরি পড়লে দামের কিছুটা পতন হতে পারে। মাঠে সবজি বেশি উঠলে বাজারে চাপ কমবে।”
তারা মনে করেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি দাম আরও কমতে পারে।
পুরো বাজারের সারসংক্ষেপ (আজকের দাম):
সবচেয়ে বেশি দাম:
- কাঁচামরিচ: ১৬০ টাকা
- গাজর: ১৪০ টাকা
- শিম: ১৪০ টাকা
- টমেটো: ১০০–১৪০ টাকা
মাঝারি দাম:
- বেগুন, করলা, বরবটি: ১০০–১২০ টাকা
- ঝিঙা, পটোল, চিচিঙ্গা: ৮০ টাকা
কম দাম:
- আলু: ৩০ টাকা
- পেঁপে: ৩০ টাকা
- ফুলকপি: ৫০ টাকা
- বাঁধাকপি: ৫০ টাকা
বিশ্লেষণ: বাড়তি সবজির দামে মধ্যবিত্ত চাপে
সবজির দাম এমন বাড়তি থাকায় সাধারণ মানুষের মাসিক বাজেটে চাপ বাড়ছে।
একসঙ্গে সবজির দাম, পেঁয়াজ, মরিচ বাড়লে বাজার সামলানো কঠিন বলে জানিয়েছে ক্রেতারা।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
- সরবরাহ স্থিতিশীল না হওয়া
- পরিবহন খরচ বৃদ্ধি
- পাইকারি বাজারের অস্থিরতা
- মৌসুমি উৎপাদন পুরোপুরি বাজারে না আসা
এসব কারণে শীতকালীন সবজির দাম স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে।
