রাজধানী ঢাকা এবং আশপাশের জেলাগুলোতে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করেছে সরকার। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন উত্তাপ এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের মধ্যেই এ মোতায়েনকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অনেকে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে— ঢাকা ও আশপাশের জেলায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিজিবির এই বিশেষ মোতায়েন কার্যকর হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাড়তি নিরাপত্তা
বিজিবি জানায়—
“রাজধানীতে নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১২ প্লাটুন বিজিবি মাঠে রয়েছে।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও সতর্ক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাজধানী ও এর পাশের জেলাগুলোকে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।
নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে না: প্রধান উপদেষ্টা
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—
কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ব্রিটিশ মন্ত্রী ব্যারোনেস জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন—
“আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ দল হিসেবে বিবেচিত। তাই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনও দলটিকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।”
এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রতিশ্রুতি দেন—
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক।
তিনি আরও বলেন—
“লাখো তরুণ প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন। গত ১৬ বছরে সাজানো নির্বাচনের কারণে তারা ভোট দিতে পারেননি। এবার জনগণ তাদের সত্যিকারের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।”
সরকার আশাবাদী যে অধিক ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতা বাড়ানোর আলোচনা
ব্রিটিশ মন্ত্রী জেনি চ্যাপম্যানের সঙ্গে বৈঠকে উঠে আসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, যেমন—
- ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন
- অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ
- বাণিজ্য সম্প্রসারণ
- রোহিঙ্গা সংকট
- বিমান ও সামুদ্রিক খাতে সহযোগিতা
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে উভয় পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্যের জাহাজ ক্রয়
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানান—
“বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক গবেষণার জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের একটি উন্নত মানের গবেষণা জাহাজ ক্রয় করছে।”
এ সিদ্ধান্ত দুই দেশের সামুদ্রিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিমান চলাচল খাতে নতুন সম্ভাবনা
ব্রিটিশ মন্ত্রী চ্যাপম্যান জানান—
“এয়ারবাস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসবেন।”
এ ঘোষণাকে বাংলাদেশের বিমান চলাচল খাতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে নীতিনির্ধারকরা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যারা
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন—
- জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান
- এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মরশেদ
- বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক
তাদের উপস্থিতি দুই দেশের কূটনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগিতাকে আরও গতিশীল করেছে।
কেন ঢাকায় বিজিবি মোতায়েন গুরুত্বপূর্ণ?
ঢাকা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন সাধারণত বিশেষ পরিস্থিতিতে হয়ে থাকে, যেমন—
- বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি
- জাতীয় নির্বাচন
- নিরাপত্তা ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তা
- হঠাৎ উত্তেজনা বা সংঘর্ষের আশঙ্কা
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিজিবি মোতায়েনকে প্রশাসনের ‘প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন—
“বিজিবি মাঠে থাকলে প্রশাসনের মনোবল বাড়ে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।”
জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
নিরাপত্তা বাড়ানো নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র।
কেউ বলছেন—
“বিজিবি থাকলে নিরাপত্তা ভালো থাকে।”
আবার কেউ বলছেন—
“নির্বাচন সামনে রেখে পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতেই হয়তো এমন ব্যবস্থা।”
অবশ্য প্রশাসন বলছে—শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাই তাদের মূল লক্ষ্য।
