সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রী তাওফিক আল-রাবিয়া জানিয়েছেন, আগামী হজ মৌসুমের আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে এক মিলিয়নের বেশি হজযাত্রীর চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। হজের এখনও ছয় মাস বাকি থাকতে এই বিশাল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়াকে তিনি সৌদি আরবের হজ ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে এক বড় অর্জন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বুধবার জেদ্দায় অনুষ্ঠিত পঞ্চম হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনীর সমাপনী দিন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য দেন মন্ত্রী।
ছয় মাস আগেই চুক্তি সম্পন্ন: সৌদির মতে এটি নজিরবিহীন সাফল্য
তাওফিক আল-রাবিয়া বলেন, হজ যাত্রার প্রস্তুতি দীর্ঘ ও জটিল। এজন্য আগে থেকেই সঠিক পরিকল্পনা এবং চুক্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া জরুরি। এ বছর এক মিলিয়নের বেশি হজযাত্রীর প্রক্রিয়াকরণ ছয় মাস আগেই শেষ হওয়ায় আগামী হজ মৌসুম আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ ও স্বচ্ছন্দ হবে।
মন্ত্রী এটিকে সৌদি আরবের জন্য ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন সাফল্য বলে উল্লেখ করেন।
৭৭ দেশের সঙ্গে সরকারি চুক্তি, বেসরকারি খাতে তিন হাজারের বেশি চুক্তি
এ বছর সৌদি সরকার মোট ৭৭টি দেশের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে হজচুক্তি সম্পন্ন করেছে। এর পাশাপাশি আগামী ২০২৬ সালের হজকে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হজ অপারেটরদের সঙ্গে বেসরকারি খাতও তিন হাজারের বেশি চুক্তি করেছে।
এর মাধ্যমে হজযাত্রা সংক্রান্ত নানা সেবা আরও বিস্তৃত ও সহজতর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এবার হজ সম্মেলনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৩ শতাংশ
পঞ্চম হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনীতে মোট এক লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী অংশ নিয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এটি ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি বলে জানান মন্ত্রী।
এ ছাড়া ১৫০টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে—হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরবের দক্ষতা, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি নির্ভর উন্নতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পাচ্ছে।
ক্রাউন প্রিন্সের নির্দেশনায় হজযাত্রীদের সেবা উন্নত হচ্ছে
হজ ও উমরা মন্ত্রী বলেন, হজযাত্রীদের নিরাপত্তা, সেবা এবং যাত্রার স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে ক্রাউন প্রিন্সের নির্দেশনা ও মনোযোগই তাদের বড় প্রেরণা। তাঁর নেতৃত্বে সৌদি আরব ধারাবাহিকভাবে হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করছে।
তাঁর ভাষায়, হজযাত্রার প্রতিটি ধাপ—দেশ থেকে প্রস্থান, মক্কা-মদিনায় আনুষ্ঠানিকতা, ফেরার যাত্রা—সব জায়গায় যেন নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন হয়, সেটিই মূল লক্ষ্য।
সম্মেলনে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়
এবারের চার দিনব্যাপী হজ প্রদর্শনীতে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তারা হজযাত্রীদের সেবায় ব্যবহৃত নতুন প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, স্মার্ট পরিচালনা ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সেবা তুলে ধরে।
গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল কিং আবদুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভস (দারাহ)। হজের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং ইসলামি ঐতিহ্য তুলে ধরায় তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
২০২৬ সালের জানুয়ারিতে মদিনায় হবে ‘ওমরা ও ভিজিট ফোরাম’
সমাপনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে মদিনায় অনুষ্ঠিত হবে ‘ওমরা ও ভিজিট ফোরাম’। এটি সৌদি সরকারের ধারাবাহিক উদ্যোগ, যাতে হজ ও ওমরা যাত্রীদের সেবা আরও আধুনিক ও ব্যবহারবান্ধব করা যায়।
তিনি বলেন, হজ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল যাত্রীদের পুরো যাত্রাপথকে নিরাপদ ও সহজ করা। সারা পৃথিবী থেকে আগত মুসলিমদের জন্য সৌদি আরব আগামীতে আরও উন্নত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
