রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে আবাসন, নির্মাণ, পানি ও বিদ্যুৎ খাতকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। বিশ্বের ২০টি দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে শুরু হওয়া এই মেগা ইভেন্ট সকাল ১০:৩০ থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ইভেন্টটির আয়োজন করেছে সেমস গ্লোবাল, যারা বহু বছর ধরে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য পরিচিত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ প্রযুক্তি ও অবকাঠামো বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সেমস–গ্লোবাল ইউএসএ অ্যান্ড এশিয়া প্যাসিফিকের প্রেসিডেন্ট মেহেরুন এন ইসলাম।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—
- মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন হায়দার, মহাপরিচালক, এইচবিআরআই
- এম এ কামাল বিল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়
- মো. মুস্তাফিজুর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়াসা
- মো. তানভীর মাসুদ, প্রকল্প প্রধান, GIZ বাংলাদেশ
তাদের উপস্থিতিতে প্রদর্শনীটি আরও গুরুত্ব পেয়েছে, কারণ তারা প্রত্যেকেই দেশের অবকাঠামো, পানি ও বিদ্যুৎ খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন।
বিশ্বের ২০ দেশ, পাঁচ শতাধিক বুথ—ঢাকায় বিশ্বের সেরা প্রযুক্তির সমাবেশ
আয়োজকেরা জানান, এবারের প্রদর্শনীতে রয়েছে—
- ৫০০-এর বেশি বুথ
- বহু আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন
- ২০টি দেশের অংশগ্রহণ
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে অংশ নিয়েছে—
- ওয়ালটন
- এসিআই
- রহিমআফরোজ
- ওমেরা
- এসএসজি
তারা নিজেদের সর্বশেষ প্রযুক্তি, পণ্য ও উদ্ভাবন দর্শকদের সামনে তুলে ধরছে।
একসঙ্গে তিনটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী
এবারের আয়োজন তিনটি ভিন্ন খাতের সম্মিলিত প্রদর্শনী—
৩০তম বিল্ড সিরিজ অব এক্সিবিশনস (নির্মাণ ও আবাসন)
এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে—
- নির্মাণ উপকরণ
- রড, সিমেন্ট
- আধুনিক ইন্টেরিয়র–এক্সটেরিয়র সল্যুশন
- স্মার্ট হোম প্রযুক্তি
২৭তম পাওয়ার সিরিজ অব এক্সিবিশনস (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি)
এখানে দেখা যাচ্ছে—
- বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তি
- ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি
- নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সোলার/উইন্ড)
- আলোক প্রযুক্তির উদ্ভাবন
- জ্বালানি–সাশ্রয়ী পণ্য
৭ম ওয়াটার বাংলাদেশ (পানি ব্যবস্থাপনা ও বিশুদ্ধকরণ)
এখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে—
- পানি বিশুদ্ধকরণ প্রযুক্তি
- বর্জ্যপানি ব্যবস্থাপনা
- স্মার্ট ওয়াটার সল্যুশন
- লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রযুক্তি
বাংলাদেশে পানি সংকট, পরিবেশগত সমস্যা ও আধুনিক প্লান্ট প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্লাটফর্ম।
জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য শক্তিকে গুরুত্ব
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এবারের প্রদর্শনীতে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে—
- সোলার প্যানেল ও ইনভার্টার
- নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সমাধান
- হাই–এফিসিয়েন্সি LED প্রযুক্তি
- শক্তি–সাশ্রয়ী স্মার্ট লাইটিং সিস্টেম
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত এখন রূপান্তরের পথে। সুতরাং, এই প্রযুক্তিগুলো দেশীয় কোম্পানি ও উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
পানি প্রযুক্তি: স্মার্ট সল্যুশনই ভবিষ্যৎ
পানি সংকট, বর্জ্যপানি শোধন, নদীর লবণাক্ততা—এসব সমস্যার সমাধানে প্রদর্শনীতে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রদর্শিত হচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- মেমব্রেন ফিল্টার
- ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার প্লান্ট
- ডি–সালিনেশন সিস্টেম
- রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রযুক্তি
এগুলো বাংলাদেশের শিল্প এলাকা ও শহর পরিকল্পনায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
আন্তর্জাতিক সেমিনার—জ্ঞান বিনিময়ের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম
প্রদর্শনী চলাকালে মোট ৫টি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এগুলোতে আলোচিত হবে—
- বৈশ্বিক নির্মাণ ট্রেন্ড
- আবাসন খাতের ভবিষ্যৎ
- নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার
- স্মার্ট পানি ব্যবস্থাপনা
- প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন
এসব সেমিনারে অংশ নেবেন দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।
সার্বিকভাবে প্রদর্শনী কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় আবাসন, নির্মাণ, পানি ও বিদ্যুৎ—এই চার খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এক জায়গায় এত প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞদের সমাবেশ—
- শিল্প উদ্যোক্তা
- নির্মাণ কোম্পানি
- প্রযুক্তি বিনিয়োগকারী
- সরকার ও নীতিনির্ধারক
সবার জন্যই বড় সুযোগ।
এই প্রদর্শনী শুধু প্রযুক্তি দেখার জায়গা নয়—
এটি সম্ভাবনা, বিনিয়োগ, নেটওয়ার্কিং এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার প্ল্যাটফর্ম।
