নীতীশ কি সত্যিই ফিরে এলেন? যে প্রশ্ন ছিল গত সপ্তাহেও, তার জবাব আজ স্পষ্ট—হ্যাঁ!
যে নীতীশ কুমারের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নিয়ে কয়েক দিন আগেও মিডিয়া ও বিরোধী শিবির প্রশ্ন তুলছিল, সেই নীতীশই এবার দশমবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন।
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত গণনার চিত্র বলছে—
এনডিএ জোট ২০০–এরও বেশি আসনে এগিয়ে, আর নীতীশের জনপ্রিয়তা যেন আরও তুঙ্গে।
বুথফেরত সমীক্ষাও জানত না এত বড় ঝড় উঠবে!
এক্সিট পোল অনুযায়ী লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হওয়ার কথা ছিল। দুটি সংস্থা এনডিএ ও মহাজোটের মধ্যে ঘনিষ্ঠ লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল।
অন্যদিকে বেশিরভাগ সমীক্ষা এনডিএকে ১৩০–১৬৭ আসনের মধ্যে দেখেছিল।
কিন্তু বাস্তবে যা দেখা গেল—
সমর্থনে ভাটা নয়, বরং নীতীশ কুমারের প্রতি সমর্থন বেড়েছে!
২০১০ সালে জেডিইউ–বিজেপি পেয়েছিল ২০৬টি আসন।
১৫ বছর পর আবারও সেই একই সংখ্যা ছুঁতে চলেছে এনডিএ।
ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির অবিশ্বাস্য জয়ের ধারাবাহিকতা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজেপির পরপর সাফল্য সত্যিই আশ্চর্যজনক।
প্রথমে মধ্যপ্রদেশ–ছত্তিশগড়, তারপর মহারাষ্ট্র–হরিয়ানা, আর এবার বিহার—
সব জায়গায় তারা ভোট বিশেষজ্ঞদের ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে।
এই জয় শুধু বিজেপির নয়, বরং ইসি (নির্বাচন কমিশন)–এর কাজকর্মকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিহারের নির্বাচনও ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে
ভোটের মুখে নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করে ৪৭ লাখ ভোটারের নাম বাদ দেয় ভোটার তালিকা থেকে।
বিরোধীদের অভিযোগ—এটি ছিল পরিকল্পিতভাবে এনডিএকে জেতানোর চেষ্টা।
রাহুল গান্ধী সরাসরি অভিযোগ করেন—
“নির্বাচন কমিশন বিজেপির হয়ে ভোট চুরি করছে।”
তেজস্বী যাদবের আরজেডিও ভোট–যাত্রা বের করে জনগণকে সতর্ক করার চেষ্টা করে।
কিন্তু শেষমেশ দেখা গেল—
বিহার তাদের বিশ্বাস রেখেছে নীতীশ ও এনডিএর ওপরেই।
কার কত আসন? পাঁচ বছরে চিত্র বদলে দেওয়ার গল্প
গত নির্বাচনে:
- আরজেডি – ৭৫
- বিজেপি – ৭৪
- জেডিইউ – ৪৩
এবারের ভোটে (সর্বশেষ গণনা অনুযায়ী):
- বিজেপি – ৯৫
- জেডিইউ – ৮২
- এলজেপি – ২০
- আরজেডি – ২৫
- কংগ্রেস – ৩
বিরোধী মহাজোট ৪০ আসন পেরোতে লড়াই করছে—এমন অবস্থায় এনডিএর সাফল্য সত্যিই অপ্রত্যাশিত।
এনডিএর ‘স্ট্রাইক রেট’ এত ভালো কেন?
১. জাতভিত্তিক বিহারে জোটের শক্তি
বিহারে সামাজিক বিভাজন সবসময়ই বড় ফ্যাক্টর।
এনডিএ এবার বেশিরভাগ শক্তিশালী জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে।
২. চিরাগ পাসোয়ানের প্রত্যাবর্তন
গতবার চিরাগের দল এলজেপি এনডিএর বাইরে থাকায় জোট দুর্বল হয়েছিল।
এবার চিরাগ ফিরে আসার ফলে জোটের জনভিত্তি আরও চওড়া হয়েছে।
২০ আসন পেয়ে তিনি নিজের অবস্থান আবারও প্রমাণ করেছেন।
৩. নারীর ভোট—নীতীশ ও মোদির গেমচেঞ্জার
ভোটের ঠিক আগে মুখ্যমন্ত্রী নারী রোজগার যোজনা–র আওতায়
বিহারের ১ কোটি ৩৭ লাখ নারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার রুপি করে পাঠানো হয়।
এই এক সিদ্ধান্তই পাল্টে দিয়েছে নির্বাচনের সমীকরণ।
নারীরা ভেদাভেদ ভুলে সোজা ভোট দিয়েছে বিজেপি–জেডিইউ–কে।
জেডিইউর আসন ৪৩ থেকে এক লাফে ৮০–তে পৌঁছানো তার প্রমাণ।
বিরোধীদের পতনের কারণ
আরজেডি: ৭৫ থেকে ২৫
যাদব–মুসলিম–মাল্লা ভোটব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল আরজেডি এবার সেই সমর্থন ধরে রাখতে পারেনি।
কংগ্রেস: ১৯ থেকে ৩
ভোটাররা পুরোপুরি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
বিরোধীদের প্রচার, যাত্রা ও অভিযোগ সবই রয়ে গেছে অভিযোগেই—
রাজ্যের মানুষ এবার ভরসা রেখেছে সরকার–পরিবর্তনের বদলে স্থিতিশীলতার ওপর।
নীতীশ কি থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী? বিজেপির ‘CM ফেস’ জল্পনার ইতি
ভোট–প্রচারে শোনা যাচ্ছিল—
ক্ষমতায় এলে বিজেপি নাকি নীতীশকে সরিয়ে নিজেদের প্রার্থী বসাবে।
কিন্তু ফলাফল হাতে আসার পর বাস্তবতা—
নীতীশকে এখন সরানো সম্ভব নয়।
কারণ—
- বিজেপি যদিও বড় দল,
- কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনও জেডিইউর ওপর নির্ভরশীল
- নীতীশকে বিরক্ত করলে মোদি সরকারই ঝুঁকিতে পড়তে পারে
এ অবস্থায় বিজেপির জন্য নীতীশই সুইডেনের ফার্নিচারের মতো—অপরিবর্তনীয়।
এই নির্বাচনের বড় বার্তা: ইসির ভূমিকা আরও কঠোর হবে
বিহারের অভিজ্ঞতা দেখে নির্বাচন কমিশন এখন অন্য রাজ্যেও
ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের কাজ বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিরোধীদের আপত্তি থাকলেও তারা এগোবে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আগামী বছর যেসব রাজ্যে নির্বাচন—
- পশ্চিমবঙ্গ
- তামিলনাড়ু
- কেরালা
- পদুচেরি
- আসাম
বিহারের অভাবনীয় সাফল্যের পর বিজেপি সব রাজ্যেই এবার আরও আগ্রাসী হবে।
