অভিযোগ তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় নারীকে উত্ত্যক্ত ও মারধরের অভিযোগে তদন্তে গিয়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ কোলাপাড়া এলাকায় এ হামলা হয়। এতে ছুরিকাঘাতে দুই কনস্টেবল ও লাঠিপেটায় এক এসআই আহত হয়েছেন।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন—
- কনস্টেবল রুহুল আমিন
- কনস্টেবল মো. নাজমুল
- এসআই মুন্না দে
তাঁরা তিনজনই পরশুরাম মডেল থানায় কর্মরত।
অহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয় পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
নারীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগে শুরু তদন্ত
পুলিশ জানায়, একই এলাকার এক ৪৬ বছর বয়সী নারীকে উত্ত্যক্ত ও মারধরের অভিযোগ ওঠে দুই প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা হলেন—
- এমাম হোসেন (২৮) — ফারুক মজুমদারের ছেলে
- রাজীব মজুমদার
গতকাল বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী নারী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। আজ সকালে সেই অভিযোগ তদন্তে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সদস্যরা।
উভয় পক্ষের বক্তব্য নেওয়ার পরই ঘটে হামলা
ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষকেই ডেকে কথা বলেন উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা।
বিবাদমান পক্ষের বক্তব্য নেওয়ার পর পুলিশ ফেরার পথে হঠাৎই অতর্কিত হামলা হয়।
হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদের ওপর—
- লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত করে
- দুই কনস্টেবলকে ছুরি দিয়ে কোপানো হয়
- এসআই মুন্না দের মাথা ও পিঠে গুরুতর আঘাত লাগে
এ ঘটনায় পুলিশের দাবি—
হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন ফারুক মজুমদার ও তাঁর দুই ছেলে।
হামলার পরপরই তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা: এলাকায় উত্তেজনা
স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়।
অনেকেই ঘটনাটিকে আইনের প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা বলে মন্তব্য করেছেন।
একজন নারী অভিযোগ জানাতে থানায় আসলে, অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এমন হামলার শিকার হওয়াকে “নির্লজ্জ ও ভয়াবহ” বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয়রা।
অভিযুক্তরা আত্মগোপনে, চলছে অভিযান
পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল হাকিম বলেন—
“ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি), সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল), গোয়েন্দা পুলিশসহ একাধিক দল মাঠে নেমেছে। হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে।”
তিনি আরও জানান—
হামলার পরই অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করছে বলে নিশ্চিত করেছে।
নারী হয়রানির অভিযোগ থেকে শুরু—শেষ হলো পুলিশের রক্তাক্ত অবস্থায়
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, হয়রানি বা পারিবারিক বিরোধের ঘটনায় পুলিশ তদন্তে গেলে মাঝে মাঝেই বাধার সম্মুখীন হয়।
কিন্তু ফেনীর এই ঘটনা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে—
কারণ এখানে ভুক্তভোগীর অভিযোগ তদন্তে যাওয়া পুলিশই হামলার শিকার।
এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা, নারীর নিরাপত্তা ও বিচারপ্রক্রিয়া—সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা কেন বাড়ছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে—
- স্থানীয় দুষ্টচক্রের দাপট
- অপরাধীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
- আইন প্রয়োগে দুর্বলতা
- ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানোর সাহস কমে যাওয়া
এসব কারণেই এমন হামলা বাড়ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা একটি সংবেদনশীল অপরাধ, এবং এর বিরুদ্ধে বিধিবদ্ধ কঠোর শাস্তি রয়েছে।
আইনগত প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্য ব্যবস্থা
এ ধরনের হামলার ঘটনায়—
- ফৌজদারি মামলা
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণের অভিযোগ
- ইচ্ছাকৃত আঘাত
- সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা
এসব ধারায় মামলা হতে পারে।
পুলিশ ইতোমধ্যে মামলা প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
