সংস্কারের পথে না হাঁটলে বিএনপি নিশ্চিহ্নের পথে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, “দেশে রিফর্ম ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে এবং নির্বাচন পিছিয়ে গেলে দুটি দলই দায়ী থাকবে।”
সোমবার রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় শ্রমিক শক্তির উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই সনদে শ্রমিক শ্রেণির রাজনৈতিক অবমূল্যায়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “সরকার যদি কোনো বিশেষ দলের পক্ষে অবস্থান নেয়, তাহলে এনসিপি শহীদ পরিবারদের সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামবে। আগামীর পার্লামেন্টে কোনো একক নেতৃত্ব দেখতে চায় না এনসিপি। এক ফ্যাসিস্টকে সরিয়ে আরেক ফ্যাসিস্ট আনার কোনো মানে নেই। সংস্কারের পথে না হাঁটলে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছেন, এখন প্রশ্ন হলো— তারেক রহমান পালাবেন কই? একাত্তরের কার্ড কিংবা শহীদ পরিবারের কার্ড খেলে কেউ যদি নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চায়, সেটা মেনে নেওয়া হবে না।”
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “মুজিবের আশপাশে থাকা কম্বল চোরেরা যেমন দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে নিয়ে গিয়েছিল, এখন আবার ‘তারেক ভাই, তারেক ভাই’ করে কিছু মানুষ একই পথে হাঁটছে। তবে নতুন প্রজন্ম (জেনারেশন জেড) যেমন প্রশংসা করতে জানে, তেমনি ভুল ধরতেও জানে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি একসময় প্রার্থী খুঁজে পেত না। আগে সাকিব আল হাসানরা ছিল নৌকার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, এখন কিছু ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছে ধানের শীষের। কিন্তু আমাদের কাছে ভোটের চেয়ে জনগণ বড়। জনগণের জয় আসবে ব্যালট রেভল্যুশনে, না হলে বুলেট রেভল্যুশনে।”
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘গণতন্ত্রের প্রতীক শহীদ নূর হোসেন স্মরণে আলোচনা সভা ও যোগদান অনুষ্ঠান’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মান্না বলেন, “মানুষের বাজারই যদি না থাকে, তাহলে ফরেন অফিসে বসে বসে জাতীয় ঐকমত্য করে কী লাভ? বেকার মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? নির্বাচন যদি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পারে, তাহলে সেই নির্বাচন হলেই বা কী, না হলেই বা কী।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে ইনকামহীন দরিদ্র ৬ কোটি মানুষকে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। প্রতি বছর বিদেশে এক লাখ কোটি টাকা পাচার হয়— এর মধ্যে মাত্র ৭২ হাজার কোটি টাকা জনগণকে দেওয়া সম্ভব। রাষ্ট্রের টাকা সরাসরি নাগরিকের কাছে যাবে, কোনো মধ্যস্বত্বভোগী চেয়ারম্যান বা মেম্বারের মাধ্যমে নয়। সাধারণ মানুষ আর জনপ্রতিনিধিদের পিছনে ঘুরবে না।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, “আমরা বলি মৌলিক অধিকার। মৌলিক অধিকার হচ্ছে রাষ্ট্র যেটা স্বীকার করে। রাষ্ট্র চাইলে এই অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। তাই এমন লোক বা দলকে ভোট দিন, যাদের আপনি বিশ্বাস করতে পারেন— যারা জনগণের বন্ধু।”
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র নির্মাণের পথে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে, তবে যতই ষড়যন্ত্র হোক কোনো লাভ হবে না। আসন্ন নির্বাচন কোনো পারিবারিক বা বড় নেতার নির্বাচন নয়— এটি গণতন্ত্রের নির্বাচন, জনগণের নির্বাচন।”
আলোচনা সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আব্দুস সালাম বলেন, “২০০৮ সালে এলাকার মানুষের কল্যাণের জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম। ১৫ বছর সেখানে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছি। ২০২৩ সালে পদত্যাগ করেছি। নাগরিক ঐক্যে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি মান্না ভাইয়ের দেশগড়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুপ্রাণিত হয়ে। আগামী নির্বাচনে দলীয়, জোটীয় বা স্বতন্ত্র— যেভাবেই হোক, আমি নির্বাচন করব।”
অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।
